JAFB | Journalist Alliance Foundation of Bangladesh
জাতীয় ফোকাস নিউজ

“আমরাই চোর ধরছি আর আমাদেরকেই চোর বলা হচ্ছে”

নিউজ ডেস্ক:
সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপণী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর কে কোন দলের, সেটা বড় কথা নয়। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত যাকেই আমরা পাচ্ছি, যেখানেই পাচ্ছি, আমরা ধরছি। তিনি বলেন, কষ্টের কথা হলো আমরাই চোর ধরছি, আর আমাদেরকেই চোর বলা হচ্ছে। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।’

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গেছে ১৯৭৫-এর পর যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই। হ্যাঁ, কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, সে ক্ষমতা কুক্ষিগত করবার জন্য এরা মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, কালো টাকা শিখিয়েছে, ঋণ খেলাপি শিখিয়েছে।’

সংসদ নেতা আরো বলেন, ‘তারা সমাজকে কলুষিত করে দিয়ে গেছে। মানুষ যে একটা আদর্শ নিয়ে চলত নীতি নিয়ে চলত। দীর্ঘ দিন এ দেশে মিলিটারি ডিকটেটরশিপ এ দেশের মানুষের চরিত্র হনন করেছে। কারণ তাদের অবৈধ ক্ষমতাটাকে নিষ্কন্টক করা- এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। সেখানে এভাবে বছরের পর বছর দুর্নীতির বীজটা বপন করেছে। এটা এখন মহিরুহ হয়ে গেছে। আপনি যতই কাটুন, আবার কোথা থেকে যেন গজিয়ে ওঠে। কারণ, মানুষের চরিত্রটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে এ চরিত্রহীনতা একেবারে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছিল। সেখানে থেকে যতই চেষ্টা করেন, এর মূলোৎপাটন যথেষ্ট কঠিন।’

করোনা মোকাবেলায় সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি করোনাকে ভয় না পেয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলে করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাবো। আমাদের দেশে করোনা রোগীর সুস্থ্যের হার অনেক বেশি। মনে সাহস রাখতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে করোনার পরিস্থিতি এবং সরকারের পদক্ষেপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, করোনার কারণে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। অতীতে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। করোনার যেন নিজস্ব একটা পদ্ধতি আছে। প্রথমে একজন আক্রান্ত হচ্ছে, এরপর দুই জন, এরপর আরও ১০ এভাবে ছাড়াতে থাকে। কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকবে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, করোনার সংক্রমণ জুলাই মাস পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। এরপর আস্তে আস্তে কমে যাবে। সেটাই হচ্ছে। আশা করি, পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

করোনা মোকাবিলা করা ডাক্তার-নার্সদের সুযোগ সুবিধা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডাক্তার-নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে যথেষ্ট বেড এবং সব রকম সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডাক্তার-নার্স যারা কাজ করছে এবং টেকনিশিয়ানদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে রাখার জন্য হোটেল ভাড়া করে থাকা-খাওয়া সব দিয়ে রাখা হচ্ছে। সেখানে খরচ তো হবেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার পরও এর মধ্যে যে খবরগুলো পাচ্ছেন বলছেন, এটা কারা করছে? এর আগে তো দুর্নীতিটাই নীতি ছিল। অনিয়মটাই নিয়ম ছিল, অনিয়মটাই নিয়ম ছিল। সেভাবেই রাষ্ট্র চলেছে।’

সংবিধান অনুযায়ি অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ঘোষণা পাঠ করে শোনানোর মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন। শেষদিনে রেওয়াজ অনুযায়ি সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাপনি ভাষণ দেন। এছাড়া বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও বক্তব্য রাখেন।

এ অধিবেশনে গত ১১ জুন অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় বাজেট পেশ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে বাজেট তৈরিতে মানুষের জীবন-জীবিকাকে গুরুত্ব দিয়ে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়।

এবারের বাজেট অধিবেশন গত ১০ জুন শুরু হয়ে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৯ কার্যদিবস পর্যন্ত চালানো হয়। বাজেটের উপর মোট ৫ ঘন্টা ১৮ মিনিট আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে মূল বাজেটের উপর ৪ ঘন্টা ১২ মিনিট এবং সম্পূরক বাজেটের উপর ১ ঘন্টা ৬ মিনিট আলোচনা হয়। মূল বাজেটের উপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১০ জন, জাতীয় পার্টির ৩ জন, বিএনপির ১ জন, জাসদের ১ জন ও ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন সংসদ-সদস্য আলোচনায় অংশ নেন।

এছাড়া, সম্পূরক বাজেটের উপর ৬ জন সংসদ-সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। বাজেট পাসসহ এ অধিবেশনে ১৬ টি সরকারি বিলের মধ্যে ৫ টি সরকারি বিল পাস হয়। আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ বিধিতে ১২ টি নোটিশ পাওয়া গিয়েছে।

এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য সর্বমোট ২৬ টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, এর মধ্যে তিনি সম্পূরকসহ ১১ টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ৪১০ টি প্রশ্নের মধ্যে ১৫৬ টি প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়।

এর আগে স্পিকার বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দুর্যোগের মধ্যেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশাকে সামনে রেখে সকলের সহযোগিতায় এবং প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সুদক্ষ নির্দেশনায় একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৈশ্বিক মহামারির সময়েও এ ধরণের বাস্তবসম্মত এবং জনমুখী বাজেট প্রণয়ন প্রশংসার দাবি রাখে।

তিন বলেন, সংসদ পরিচালনায় সংসদ-সদস্যদের সহযোগিতা একান্ত অপরিহার্য। এ অধিবেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় সংসদ সদস্যদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য স্পিকার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, আশা করা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিড-১৯ প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। আগামী ২০২০-২১ অথর্বছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ অর্জন সম্ভব হবে।

তিনি বর্তমান পরিস্থিতি মোকবেলা করে সফল উত্তরনণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ ও তা বাস্তবায়নের বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এ জন্য অভ্যন্তরিণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে করণীয় বিষয়ের তিনি উল্লেখ করেন।

এই সংক্রান্ত আরও খবর

প্রবীণ সাংবাদিক শাহজাহান মিয়ার মৃত্যুতে বাসাজ’র শোক

Shahadat Hossen

মাসে ১০ কোটি করে পদ্মার বকেয়া পরিশোধে রাজি বিমান

Shahadat Hossen

আফগানিস্তানফেরত ফখরুল হাল ধরেন হুজির, ছিল বড় হামলার পরিকল্পনা

Shahadat Hossen

হেযবুত তওহীদের নারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ-মিছিল

Shahadat Hossen

ট্রেনে কাটা পড়ে মা-মেয়ের মৃত্যু

Shahadat Hossen

কুমিল্লায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুজনের মৃত্যু

Shahadat Hossen

Leave a Comment