বজ্রশক্তি ডেস্ক:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ার করে বলেছে যে, “ট্রল বা ব্যঙ্গ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব” করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তাদের পদক্ষেপকে দুর্বল করে তুলছে। ডাব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক ডা. টেডরস আধানম ঘেব্রেয়েসাস সাংবাদিকদের বলেন, ভুল তথ্য “আমাদের সাহসী কর্মীদের কাজকে আরো কঠোর করে তুলছে।”
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে ৩৪ হাজার ৮০০ জন আক্রান্তের খবর মিলেছে যাদের মধ্যে বেশিরভাগই চীনে। চীনে এ পর্যন্ত ৭২৩ জন এবং ফিলিপাইনে একজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ডা. টেডরস বলেন, চীনে আক্রান্ত ৩৪,৫৯৮ জনের মধ্যে ২৫০০০ জনই উবেই প্রদেশের। এই প্রদেশটিতেই প্রথম সংক্রমণ শুরু হয়েছিল এবং এর পর থেকে সেটি এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমি সত্য তথ্যের ভীতি নিয়ে নয় বরং গুরুত্ব নিয়ে সংক্ষেপে কথা বলতে চাই,” ডা. ট্রেডরস বলেন, “নিজের এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য মানুষের সঠিক তথ্য জানার সুযোগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন যে, ২০১৯-এনকভ নিয়ে ভুল তথ্য সাধারণ মানুষের মনে দ্বন্দ্ব এবং ভীতির সঞ্চার করে। ডাব্লিউএইচও’তে আমরা শুধু ভাইরাসের বিরুদ্ধেই লড়াই করছি না, বরং এনিয়ে ট্রল বা ব্যঙ্গ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিরুদ্ধেও লড়ছি যা আমাদের পদক্ষেপকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
আজ গার্ডিয়ানের(সংবাদপত্র) এক শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে ভুল তথ্যই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক’।
ওই প্রতিবেদনে যা গার্ডিয়ানের মতামত অংশে প্রকাশিত হয়েছে সেখানে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম কুচারস্কি বলেন, অনলাইনে ভাইরাস নিয়ে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে “সেগুলোকে বাস্তব জীবনে ভাইরাস হিসেবে গণ্য করা।”
সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে ভাইরাসটি নিয়ে বেশ কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বও ছড়িয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম চ্যানেল ওয়ান তাদের সন্ধ্যার প্রাইম টাইম সংবাদ অনুষ্ঠান ভ্রেমিয়াতে করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সম্প্রচার করছে। এর অংশ হিসেবে একজন উপস্থাপক ভাইরাসটির সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সংশ্লিষ্ট করেছেন, এবং দাবি করেছেন যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিংবা ওষুধ কোম্পানিগুলো এর পেছনে দায়ী।
এছাড়া ব্রিটিশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাবলয়েড মিডিয়ায় প্রকাশিত আরেকটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব-যেটি পড়ে ভুল প্রমাণিত হয়েছে- সেটিতে চীনের এক নারীর বাদুরের স্যুপ খাওয়ার ভিডিও’র সাথে করোনাভাইরাসকে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরুর দিকে এটির প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল উহানে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু আসলে ভিডিওটি চীনে নয় বরং ২০১৬ সালে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের পালাউ’তে ধারণ করা হয়েছিল। আর এখন গত মাসে প্রকাশিত ব্যাপক হারে অসমর্থিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় করোনাভাইরাসকে সাপের সাথে সংশ্লিষ্ট বলা হচ্ছে- যার জেরে এটিকে “স্নেক ফ্লু” বলে বিশ্ব জুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
করোনাভাইরাস নিয়ে সর্বশেষ কী জানা যায়?
ডা. টেডরস বলেন, ভাইরাসটি এখনো উবেই কেন্দ্রিক এবং গত চার দিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যায় কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। যাই হোক, তিনি বলেন যে, ভাইরাসটির সংক্রমণ একটি জায়গায় এসে স্থির হয়েছে কিনা তা এখনই বলা যাবে না। কারণ প্রাদুর্ভাব সাধারণত দ্বিতীয় বার ব্যাপক হারে শুরু হওয়ার আগে সংক্রমণ কিছুটা ধীর হয়।
কিন্তু তিনি বলেন যে, “ধীর হওয়াটা” ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার একটা সুযোগ তৈরি করে।
এদিকে, চীনের মূল ভূ-খণ্ড থেকে আসা যে কাউকে দুই সপ্তাহ কোয়ারিন্টিনের রাখা বাধ্যতামূলক করে নতুন নিয়ম চালু করেছে হংকং। পর্যটকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের হোটেল কক্ষে নিজেদের আলাদা করে রাখতে কিংবা সরকার পরিচালিত কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে থাকতে। আর বাসিন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাইরে বের না হয়ে তাদের বাড়িতেই অবস্থান করতে।
নতুন এই নিয়ম কেউ না মানলে তার জেল এবং জরিমানা হতে পারে। হংকংয়ে এখনো পর্যন্ত ২৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার উহানের জিনইনতান হাসপাতালে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সী একজন মার্কিন নাগরিক মারা গেছে। এর মধ্য দিয়ে চীনের নাগরিক বা চীনা বংশোদ্ভূত নয় এমন কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন।
শনিবার, ফ্রান্স নিশ্চিত করেছে যে, তাদের উঁত-স্যাবোয়া এলাকায় নতুন করে পাঁচ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ বছর বয়সী এক শিশুও রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১ জনে।
ফরাসি স্বাস্থ্য মন্ত্রী অ্যানিয়েস বুজা বলেন, নতুন আক্রান্ত পাঁচ জনই ব্রিটিশ নাগরিক এবং তারা একটি কাঠের কটেজে থাকতেন। কটেজটিতে একজন ব্রিটিশ নাগরিক রয়েছেন যিনি সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছেন। তবে তাদের অবস্থা মারাত্মক নয় বলে জানানো হয়েছে। কটেজে থাকা অন্য ছয় ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
চীনে এক চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়েও ব্যাপক ক্ষোভ ও বিষাদ তৈরি হয়েছে। এই চিকিৎসক নতুন করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি উবেই প্রদেশের উহানে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সময় এতে আক্রান্ত হন।