নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মোট আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক ১ হাজার ২৬৮ জন, নার্স ১ হাজার ১৯৯ এবং অন্যান্য সহযোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ৬২৮ জন। এ ভাইরাসে ইতোমধ্যে ৪৭ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও অনেকের। তাদের অনেকেই সরাসরি করানোর রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, আবার কেউবা সরাসরি করোনা চিকিৎসাসেবার সাথে জড়িত না থাকলেও অন্য কারও মাধ্যমে আক্রান্ত হন। করোনায় মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকদের মধ্যে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটসহ (আইসিইউ) বিভিন্ন সাব স্পেশালিটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও রয়েছেন। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। তখন থেকে সাধারণ মানুষের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে যতটা না আলোচনা চলছে তার চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িতদের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে।
কেন এতসংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হচ্ছেন এবিষয়ে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি নবীন চিকিৎসকরা রয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিজ নিজ বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলেও তাদের কারোরই সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় দীর্ঘমেয়াদি বা স্বল্প মেয়াদি ট্রেনিং নেই। তাছাড়া করোনাভাইরাস রোগটি একেবারে নতুন এবং ছোঁয়াচে হওয়ায় সতর্কতা সত্তে¡ও আক্রান্ত হচ্ছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছোঁয়াচে রোগ থেকে চিকিৎসকদের রক্ষায় সর্বপ্রথম যেটা দরকার তা হলো উন্নতমানের সুরক্ষাসামগ্রী- সার্জিক্যাল মাস্ক, আই (চক্ষু) শিল্ড, ভালোমানের পিপিই (সুরক্ষা পোশাক), হেড কভার এবং সু কভার। এ ক্ষেত্রে এন-৯৫ মাস্কসহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহকৃত সুরক্ষা সামগ্রীর মান নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল।
এ ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা। করোনাভাইরাস নাক, মুখ, চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানা উপসর্গ ঘটায়।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার্থে ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষিত রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, মার্চ মাস থেকে তিনি দুই দফায় করোনা ডিউটি করেছেন। তার মতে, চিকিৎসকদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, রোগীর সংস্পর্শে আসা। করোনাভাইরাস নাক, মুখ, চোখের মাধ্যমে প্রবেশ করে শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানান উপসর্গ ঘটায়।
তিনি বলেন, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছোঁয়াচে রোগ থেকে চিকিৎসকদের রক্ষায় সর্বপ্রথম যেটা দরকার, তা হলো উন্নতমানের সুরক্ষাসামগ্রী (সার্জিক্যাল মাস্ক,আই (চক্ষু) শিল্ড, ভালোমানের পিপিই, হেড কভার এবং সু কভার। সেক্ষেত্রে সুরক্ষাসামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় তিনি উদ্বিগ্ন বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসকদের অনেকেই নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন নন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ডিউটির পরেই গভীর রাত পর্যন্ত চেম্বারে রোগী দেখা কিংবা অস্ত্রোপচার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। গৎবাঁধা রুটিনে স্ট্রেসফুল জীবনযাপন করেন। তারা নিয়মিত ব্যায়াম তো করেন না, বরং অনেকেরই ধূমপানসহ ফাস্টফুড খাওয়ার বদঅভ্যাস রয়েছে। তাছাড়া অনেকেই ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশনসহ আরও অনেক রোগে ভুগছেন আগে থেকেই, তারা করোনায় শিকার হয়ে জটিলতর অবস্থায় চলে যাচ্ছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব ইকবাল হোসেন সবুজ জানান, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের শয্যাপাশে কাছাকাছি থেকে নার্সরা দায়িত্ব পালন করছেন। ক্লোজ কন্টাক্টে এসে রোগীর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা (জ্বর মাপা, উচ্চ রক্তচাপ মাপা, ইনজেকশন ও সালাইন পুশ করাও ওষুধ খাইয়ে দেয়া) ডিউটিতে থাকার ফলে তাদের অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। তাছাড়া নতুন ধরনের রোগটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি।
তাছাড়া হাসপাতালে ডিউটিতে এসে পিপিই পরিধান এবং সঠিক নিয়ম মেনে পিপিই খুলে ফেলার জন্য আলাদা কোনো কক্ষ না থাকায় আক্রান্তের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, একজন নার্স ওয়ার্ডে রোগী দেখে এসে যে কক্ষে বসছেন সেই কক্ষে এসে তার পাশেই দাঁড়িয়ে কিংবা বসে তার সহকর্মী পিপিই পরিধান করছেন কিংবা খুলে রাখছেন। আলাদা চেঞ্জিং রুম না থাকায় নার্সদের অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন।