JAFB | Journalist Alliance Foundation of Bangladesh
জাতীয় ফোকাস নিউজ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারদের মুক্তি চায় টিআইবি

নিউজ ডেস্ক:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া বিভিন্ন পেশাজীবীদের মুক্তি দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। শনিবার (২০ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দুর্নীতিবিরোধী জার্মানভিত্তিক সংস্থাটি এ দাবি জানায়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে- বিশেষ করে চলমান করোনা মহামারিতে সেবাপ্রদান, ত্রাণ বিতরণ ও নানা বিষয়ে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ বা প্রকাশ, তথ্যপ্রচার, মতপ্রকাশ, এমনকি কার্টুন প্রকাশের কারণে নানা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে সারাদেশে সাংবাদিক, শিক্ষক, লেখক, কার্টুনিস্ট, সমাজকর্মী, এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে নিবর্তনমূলক হামলা, মামলা, চাকরিচ্যুতি ও হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথাকথিত ‘গুজব ছড়ানো’, ‘মিথ্যা তথ্যপ্রকাশ’, ‘সরকারের সমালোচনা’, ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়া’, ‘হত্যার হুমকি’, ‘মানহানি’ ইত্যাদি যুক্তিতে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও তথ্যপ্রকাশ এবং জানার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। আর এটি নিবর্তনমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি।

তিনি বলেন, অনেককেই অন্যায্য মামলায় নিগৃহীত করে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে। যা শুধু স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য হুমকি নয়, বরং দেশে স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও স্বাভাবিকতায় রূপান্তর করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, আপনারা কাজ দিয়ে সমালোচনার জবাব দিন। প্রকাশিত তথ্যের গুরুত্ব দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করুন।

‘তথ্যপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে বা ভিন্নমত দমন করে অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারিতার পথে হাঁটবেন না। অবিলম্বে এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নিবর্তনমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং অন্যায্যভাবে গ্রেফতারদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে নির্মোহ ও যথাযথ তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

সম্প্রতি নিখোঁজ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান না করে উল্টো নিজ দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দৃশ্যত বানোয়াট মামলায় তাকে গ্রেফতার এবং অমানবিকভাবে হয়রানির উদাহরণ টেনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি-অনিয়মের বিভিন্ন তথ্যপ্রকাশ কিংবা সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের আচরণ প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার পরিপন্থি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্বাধীন মত বা সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে একজন নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করাটাই যেখানে নিবর্তনমূলক, সেখানে এ ধরনের মামলার সূত্রে আটকদের নিগৃহীত করা নাগরিক অধিকারের চূড়ান্ত অবমাননা। অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তথ্যপ্রকাশকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করে প্রকাশিত তথ্য যাচাইপূর্বক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব, সেখানে তা না করে উল্টো তথ্যপ্রকাশকারীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রশ্ন আসা অস্বাভাবিক নয় যে- রাষ্ট্র কী তবে অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্য উদঘাটনে নিরুৎসাহিত করছে? দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, না-কি দুর্নীতির বিচারহীনতা নিশ্চিতের প্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে?

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ বছর বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা এবং আটকের কঠোর সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাষ্ট্রের উচিত ছিল এমন পরিবেশ তৈরি করা- যাতে গণমাধ্যম স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে তথ্যপ্রকাশ করতে পারে। কারণ তথ্যের স্বাভাবিক প্রকাশ বা প্রবাহে ঘাটতি পড়লে গুজব ও আস্থাহীনতার বিকাশ ঘটবেই।

‘বাস্তব তথ্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে প্রকাশিত তথ্যের যত বেশি ফারাক হবে, তত বেশি আতঙ্ক সৃষ্টি হবে। সংকট বাড়বে এবং ভুল পরিকল্পনার আত্মঘাতী ঝুঁকি তৈরি হবে। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তার অজুহাত তুলে জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র গণমাধ্যমসহ নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপের মুখে রেখেছে। তাই অবিলম্বে এই আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিল করতে হবে এবং দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্যপ্রকাশকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করে ইতোমধ্যে আটকদের বা গ্রেফতারদের মুক্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সারাদেশের ১৮০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ৫৭ ধারায় মামলা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু ২০১৯ সালেই ৩৮ জন সাংবাদিক মামলা, গ্রেফতার, রিমান্ড ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মোট ৬৭টি মামলার মধ্যে ৩৭ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে কার্টুনিস্ট, সাংবাদিকসহ ৭৯টি ঘটনায় মোট ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব মামলায় সাংবাদিকসহ অন্যান্য নাগরিককে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়েছে, তা একটি গণতান্ত্রিক দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারকে ভূলুণ্ঠিত করে স্বেচ্ছাচারিতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের শামিল বলে মনে করে টিআইবি।

এই সংক্রান্ত আরও খবর

প্রবীণ সাংবাদিক শাহজাহান মিয়ার মৃত্যুতে বাসাজ’র শোক

Shahadat Hossen

মাসে ১০ কোটি করে পদ্মার বকেয়া পরিশোধে রাজি বিমান

Shahadat Hossen

আফগানিস্তানফেরত ফখরুল হাল ধরেন হুজির, ছিল বড় হামলার পরিকল্পনা

Shahadat Hossen

হেযবুত তওহীদের নারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ-মিছিল

Shahadat Hossen

ট্রেনে কাটা পড়ে মা-মেয়ের মৃত্যু

Shahadat Hossen

কুমিল্লায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুজনের মৃত্যু

Shahadat Hossen

Leave a Comment