কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
শুকনো মৌসুমে ধরলার ভাঙ্গন আতঙ্কিত করে তুলেছে হুমকীতে পড়া গ্রামের মানুষ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তাই নিজেদের শেষ আশ্রয় ঘর-বাড়ি আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে সরকারের দৃষ্টি আর্কষন করতে নদী পাড়ে জড়ো হয়ে দ্রুত ভাঙ্গন রোধের দাবী জানিয়েছেন তারা। শুকনো মৌসুমেই ভাঙ্গন রোধে দ্রæত কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে আগামী বর্ষা মৌসুম আসার আগেই সব হারাতে হবে তাদের।
এ কথা গুলো বলছেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের মোগলবাসা ঘাটে ভাঙ্গন রোধের দাবীতে মানব বন্ধনে আসা গ্রামের মানুষ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে মোগলবাসা ঘাটে গিয়ে দেখা যায় শত শত শিক্ষার্থী, স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধিরা ধরলা নদীর ভাঙ্গনের ওপর দাড়িয়ে সংবাদকর্মীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছেন। তাদের আঁকুতি আমরা কিছু চাই না। প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের নদী ভাঙ্গনটা বন্ধ করে দেন। আমাদের ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, মসজিদ, মন্দির রক্ষায় যেন দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করেন।
এ কথাগুলো শুধু একজন বা দু’জনের নয়, মানব বন্ধনে অংশ নেয়া শত শত শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত এক মাস ধরে সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের কিসামত, কিসামত মোগলবাসা ও সিতাইঝাড় গ্রামে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকাড় ধারন করেছে। ইতিমধ্যেই কয়েক’শ ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনের হুমকীতে পড়েছে ঐ তিন গ্রামের ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি, মোগলবাসা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, খেলার মোড় মাদ্রাসা, সেনের খামার উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, সন্ন্্যাসীর পাঠ মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দির, ঐতিহ্যবাহী মোগলবাসাহাট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। গত এক বছরের মধ্যে এক কিলোমিটার দুরে থাকা ধরলা নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর রক্ষা বাঁধের একেবারেই কাছে চলে এসেছে।
এ অবস্থায় ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন পদক্ষেপ না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে বাঁশের বান্ডেল দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও তা কোন কাজে আসছে না।
মোগলবাসা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল হাই জানান, আমার বিদ্যালয়ে ১২শ শিক্ষার্থী। নদী বিদ্যালয়ে সন্নিকটে চলে এসেছে। এখনই ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা না নিলে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তখন এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার উপায় থাকবে না।
মোগলবাসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: নুরুজ্জামান বাবলু জানান, ধরলার ভাঙ্গনে ইতিমধ্যে মোগলবাসা ইউনিয়নের বেশকিছু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে শুকনো মৌসুমেই আরো বেশকিছু ঘর-বাড়ি ফসলী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হবে। আমি দ্রুত এ ভাঙ্গন প্রতিরোধে সরকারের নিকট জোড় দাবী জানাচ্ছি।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, মোগলবাসার ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জরুরী ভিত্তিতে অস্থায়ী প্রতিরোধের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সাথে সাথে ধরলার ভাঙ্গন রোধে ঐ এলাকায় অস্থায়ীভাবে কাজ শুরু করা হবে। এছাড়াও ধরলার ডানতীর রক্ষা প্রকল্প নামে স্থায়ী প্রতিরোধের জন্য একটি প্রকল্প একনেকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রকল্পটি পাশ হলে মোগলবাসাসহ ধরলার ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোতে ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব হবে।