নিউজ ডেস্ক:
মহানগরীর সব এলাকায় নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে না পারলেও ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা ওয়াসার ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৫১টি পানির সংযোগ রয়েছে। ওয়াসার দাবি, ওই সংযোগ থেকে এক কোটির বেশি মানুষ পানি ব্যবহার করে।
গত ২০১৯ সালে আবাসিকে প্রতি হাজার লিটার পানির বিল ছিল ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। তারপর কয়েক দফায় সেই দাম বেড়ে আবাসিকে হয়েছে ১১টা ৫৭ পয়সা এবং বাণিজ্যিক ও শিল্পে হয়েছে ৩৭ টাকা ৪ পয়সা।
ওয়াসার তথ্যমতে, ঢাকায় এখন দৈনিক পানির উৎপাদন ২৪৫ কোটি লিটার, যেখানে চাহিদা ২৩০ থেকে ২৩৫ কোটি লিটার। তবে অভিযোগ রয়েছে, কাগজে-কলমে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি দেখানো হলেও বছরজুড়েই রাজধানীতে পানি সঙ্কট থাকে। ঢাকা ওয়াসা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সূত্র মতে, নতুন দামে আবাসিক সংযোগে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির বর্তমান মূল্য ১১ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হচ্ছে। আর বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আবাসিকে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম বাড়ছে ৮ টাকা ৪৩ পয়সা এবং বাণিজ্যিক ও শিল্পে পানির দাম বাড়ছে ২৭ টাকা ৯৬ পয়সা। যা বর্তমান মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে ওয়াসার বাৎসরিক পানির গড় বিল করা হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
তাছাড়া মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন বিলও ঢাকা ওয়াসার পানির বিলের সমান। ফলে পানির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন বিলও দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কাগজে-কলমে পুরান ঢাকা, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকা, বাসাবো, গেন্ডারিয়াসহ আশপাশের এলাকা, গুলশান-বনানী-বারিধারা, মতিঝিল, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মগবাজার এলাকা, দনিয়া-শ্যামপুরসহ আশপাশের ৮৮২ কিলোমিটার পয়ঃনিষ্কাশন লাইন এবং এর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে ৬১ হাজার ৩৪৯ জন গ্রাহকের লাইন। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পয়ঃসংযোগ লাইনের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। মূলত দীর্ঘ সংস্কার না করায় ওসব সংযোগ অকেজো হয়ে গেছে। তারপরও বর্তমান মূল্য অনুযায়ী ওয়াসা ওসব গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিল নিচ্ছে। পানির সমান পয়ঃবর্জ্যে দাম বাড়ায় তা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসার প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সংকুলানের জন্য আবাসিকের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির নতুন মূল্য ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিকের প্রতি এক হাজার লিটার পানির মূল্য ৬৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। স্থানীয় সরকার সচিব বরাবর লেখা ওয়াসার প্রস্তাব সম্বলিত চিঠিতে বলা হয়, ওয়াসা ঢাকা শহরের সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্টর্ম ড্রেনেজ (আংশিক) সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে ড্রেনেজ সেবার জন্য ওয়াসা কোনো মূল্য গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করে না। ওয়াসার পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য পানির মূল্য বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ওয়াসার প্রস্তাব সম্বলিত চিঠির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ওয়াসার ১ হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ, ওয়াসার ঋণের পরিমাণ জানতে চাওয়া হয়। তার জবাবে ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হয়, ওয়াসার বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের ঋণ বাবদ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়েছে। তাছাড়া প্রতি হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা পড়ছে বলে জানানো হয়। পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন আইন-১৯৯৬ (১৯৯৬ সনের ৬ নম্বর আইন)-এর ২২ অনুযায়ী পানির দাম বাড়ানোর অনুমোদন দিতে অনুরোধ করা হয়।
এদিকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগে গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গ্রাহকদের মতে, এখনও অনেক এলাকায় পানির সঙ্কট ও পানিতে দুর্গন্ধ রয়েছে। সেসব সমস্যার সমাধান না করে ওয়াসা এভাবে পানির দাম বাড়াতে পারে না। এটা ওয়াসার যথেচ্ছাচার মনোভাবের প্রতিফলন। জনগণের মতামত বা সুবিধাকে তারা কোনোভাবেই প্রাধান্য দিচ্ছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা ওয়াসা রাজধানীবাসীর অত্যাচারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কেননা প্রতিষ্ঠানটি নোংরা ও দূষিত পানি সরবরাহ করছে এবং জোরপূর্বক পানির দাম বৃদ্ধি করছে। তাছাড়া শহরের পয়ঃনিষ্কাশন সিস্টেম অকেজো হয়ে পড়লেও পানির সমান দাম আদায় করছে ঢাকা ওয়াসা। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা ওয়াসা নিজস্ব আয় দিয়ে সংস্থার পরিচালন ব্যয় ও উন্নয়ন প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। যে কারণে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। সবদিক বিবেচনা করেই ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধি করা হবে- এমন একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু তা কত হবে সেটা পরে জানানো হবে।