নিউজ ডেস্ক:
নিজ শিশুকন্যা বুলবুলি আক্তারকে (৭) বাঁচানোর জন্য কী প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাই না চালিয়েছিলেন বাবা শাহজাহান (৪০)। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে পড়ে যায়। এতে ডুবে শিশু বুলবুলি প্রাণ হারালেও মানছিলো তার না বাবার মন।
নিজের আদরের কন্যাকে বুকে জড়িয়ে অঝরে কাঁদছিলেন শাহজাহান। আর্তনাদ আর আহাজারিতে ভারি করছিলেন সেখানকার আকাশ-বাতাস। এমন সব ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
অনেকেই ভেবেছেন, বাবা-সন্তান দুইজনেই হারিয়ে গেছেন দূর আকাশে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন সন্তানকে বুলবুলিকে বুকে জড়িয়েই শেষ নিশ্বাস ছেড়েছেন বাবা শাহজাহানও।
কিন্তু না! বাবা শাহজাহান প্রাণে বেঁচে গেছেন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে ছাড়াও পেয়েছেন তিনি। কিন্তু চিরতরে হারিয়েছে তার আদরের কন্যাটিকে। মূলত বাবার বুকেই অন্তিম যাত্রা হয়েছে বুলবুলি আক্তারের। .বাবা-কন্যার এমন দৃশ্যই কাঁদিয়েছে কাছের মানুষ থেকে দূরের মানুষকেও। করে তুলেছে শোক বিহ্বল। মৃত্যুর অন্তিম সময়টিতেও বাবা শাহজাহান পরম মমতায় বুকে আগলে রেখেছিলো বুলবুলিকে।
এই শোকার্ত ও বেদনাবিধুর দৃশ্যই আরও একবার জোরেশোরে উচ্চারণ করলো আর কত প্রাণ হারালে বন্ধ হবে এই সড়ক সন্ত্রাস?
ছবির এ মর্মন্তুদ দৃশ্যটি মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার। ওই সময়েই ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের ফুলপুর উপজেলার বাঁশাটি এলাকায় যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুড়ে পড়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৮ জন।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া জানান, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বাবার বুকে সন্তানের বেদনার্ত ছবিটি সবার হৃদয়ে দাগ কেটেছে। বাবা শাহাজাহান বেঁচে আছেন। কিন্তু অনেকেই না বুঝে বাবা-সন্তানের মৃত্যুর দৃশ্যের ছবি বলে চালিয়ে দিচ্ছে। বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতেই এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছি।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরাও জানিয়েছেন, মাইক্রোবাস সড়কের পাশের পুকুরে ডুবে গেলে নিজ সন্তানকে বুকে জড়িয়ে রক্ষার শেষ চেষ্টা করেছেন বাবা (শাহাজাহান)।
ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার টিম যখন তাদের পানি থেকে উদ্ধার করে তখনও প্রাণ হারানো মেয়েটিকেই বুকে জড়িয়ে শোকাতাপ করছিলেন শাহজাহান।
সন্তানের প্রতি একজন বাবার ভালোবাসা কতটা তীব্র হতে পারে এটাই প্রমাণ করেছেন বাবা শাহজাহান। একমাত্র বাবা ছাড়া এই ভালোবাসা কেউ কখনও অনুভব করতে পারবেন না।
নিজের সন্তানের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজটাও অনায়াসে করতে দ্বিধা নেই যে মানুষটির তিনি বাবা। স্থানীয় সূত্র জানায়, মূলত মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে ডুবে গেলে ঘটনাস্থলেই শাহাজাহানের মা মিলুয়ারা বেগম (৫৫) ও স্ত্রী বেগম (৩০) এবং শিশুকন্যা বুলবুলি মারা গেছে।
শাহজাহান ও শারফুলের খালাতো ভাই হাশেমের জানাজায় অংশ নিতে জেলার ভালুকা উপজেলা থেকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় যাওয়ার পথে ফুলপুর ছনধরা ইউনিয়নের বাঁশাটি গ্রামে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের একটি পুকুরে পড়ে প্রাণ হারায় ৮ জন। পরে খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। এ সময় শিশুসহ ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে একই পরিবারেরই তিন সদস্য। জীবিত উদ্ধার করা হয় ছয় জনকে।