নিউজ ডেস্ক:
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার অন্ধকার ঘরে কালো বিড়াল খুঁজে বেড়াচ্ছে। করোনা সমস্যার কীভাবে সমাধান করা যাবে, সেটা সরকারের চিন্তার মধ্যে নেই।
বৃহস্পতিবার সকালে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত রাপিড কিট প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা.মহিবুল্লাহ খন্দকার বিএসএমএমইউ এর সুপারিশের এক সপ্তাহ পরও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর কিটের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে অভিযোগ তোলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান বলেছেন, এবারের বাজেট হওয়া উচিত ছিল করোনা ভাইরাস মোকাবিলার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে। কিন্তু বাজেটে করোনা মহামারী মোকাবিলার বিষয়টিই নেই। এটা একটা অদ্ভুত, অবাস্তব বাজেট হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মুক্তি এবং তার লেখা নিবন্ধ ‘করোনা বনাম বিশ্ব পুঁজিবাদ: ২০২০-২১ বাংলাদেশ বাজেট’ নিয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কভিড-১৯ শনাক্ততরণ র্যাপিড কিটের গবেষক দলের প্রধান ডা. বিজন কুমার শীল, র্যাপিড কিট প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. মহিবুল্লাহ খন্দকার, ডা. জাফরুল্লাহর চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে থাকা চিকিৎসক মামুন মোস্তফা এবং ডা. নাজিব মোহাম্মদ। ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তার হয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর চিকিৎসকরা দেন। তবে তিনি বারবার চেষ্টা করেন নিজে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আসলে সরকার একটা অন্ধকার ঘরে কালো বিড়াল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। করোনা সমস্যাটা তারা কিভাবে সমাধান করবে তাদের চিন্তার মধ্যে নাই। মূল প্রবাহ তো আসবে এ মাসে বা পরের মাসে, যখন এটা গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়বে। সে জন্য একটা সুস্থ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দরকার। এটা জনগণের দাবি ওঠানো ছাড়া, আওয়াজ ওঠানো ছাড়া বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্র শুধু নয়, কোন ক্ষেত্রেই ভাল কিছু হবে না। এজন্য স্বাস্থ্য আন্দোলনটাকে আরও শক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। দাবি উঠতে হবে ওষুধ নীতি বদলানোর জন্য। ওষুধ নীতি বদলালে দেশে ওষুধের দাম এখনকার চেয়ে অর্ধেক হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার লেখা বাজেট সংক্রান্ত নিবন্ধে করোনা মহামারী মোকাবিলার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা আছে। সেখানে রোগীদের কোন ক্ষেত্রে হাসপাতালে কি ব্যবস্থায় নিতে হবে, বাড়িতে বসে ১০০ টাকার মধ্যে কিভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা পাবে সে সম্পর্কে বলা আছে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার জন্য দেশবাসীর অভূতপূর্ব ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা যে আমার জন্য দোয়া করেছেন, তা অকল্পনীয়। একজন মানুষকে যে মানুষ এতো ভালোবাসতে পারে, তা আগে জানতাম না। একাত্তরে যুদ্ধ করে ভালোবাসা পেয়েছিলাম। এখন আবার আপনাদের ভালোবাসা পাচ্ছি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের র্যাপিড কিট বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে অ্যান্টি বডি কিটের বিষয়ে প্রতিবেদন আরও এক সপ্তাহ আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে দেওয়া হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সেই প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সে অনুযায়ী অনুমোদন দেওয়ার জন্য কয়েক দফা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে চিঠি লেখার পরও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
অধিদপ্তরে ঢোকার মুখে গেটে বড় তালা ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে এখন ঢোকা খুব মুশকিল। গণস্বাস্থ্যের কেউ হলে সেটা আরও মুশকিল হয়ে যায়। বারবার সেখানে গিয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়েও সময় পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও গণস্বাস্বাস্থ্যের একজন কর্মকর্তা অধিদপ্তরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে।
তিনি আরও জানান, অ্যান্টিজেন কিট পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ’র সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। অ্যান্টিজেন কিট পরীক্ষার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা, নমুনা সংগ্রহের জন্য যে ডিভাইসের জন্য এটা স্থগিত রাখা হয়েছিল, সেই ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার একটি বিশেষ ধরনের প্রটোকল দরকার। এজন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতিও নিতে হয়। সেটাও সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী সপ্তাহ থেকেই পরীক্ষা শুরু হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তার চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মামুন মোস্তাফি বলেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরীর করোনা নেগেটিভ হলেও বুকের ৮০ শতাংশ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু তাকে দামী ওষুধ দিলেও তা গ্রহণ করেননি। তিনি বলে দেন, গ্রামের একজন মানুষ, খেটে খাওয়া কৃষক যে সেবা নিতে পারেন না, যে ওষুধ কিনতে পারেন না, তিনি তা গ্রহণ করবেন না। ঢাকা মেডিকেলে তার জন্য কেবিন রেডি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বলে দিয়েছেন, ওখানে থেকে তার গ্রামের একজন মানুষ চিকিৎসা নিতে পারবেন না, তাই তিনিও নেবেন না।
বাজেটের বিষয়ে মাহমুদর রহমান মান্না আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, সরকার পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট করেছে। এই বাজেটে ঘাটতি দেখানো হয়েছে। ঘাটতি ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মেটানোর কথা বলা হয়েছে। অথচ ব্যাংক মালিকদের সংগঠন থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাদেরই উল্টো টাকার প্রয়োজন, অর্থাৎ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এ ঘাটতি মোকাবিলা করা যাবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে তিন লাখ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রার কথা অর্থমন্ত্রী জানালেও এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খুব চেষ্টা করা হলেও দুই লাখ কোটি টাকার বেশি তারা দিতে পারবে না। এর মানে বাজেটে তিন লাখ কোটি টাকার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অতএব এটাকে সুস্থ চিন্তার বাজেট বলা যায় না।
তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেট হওয়া উচিত ছিল করোনা মহামারী মোকাবিলার বাজেট। কিন্তু বাজেটে তার একেবারেই কোনো প্রতিফলনই নেই।