বজ্রশক্তি ডেস্ক:
দেশে সরকারিভাবে বিদেশ যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ফি জমা দিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হয়েছে রোববার থেকে। সরকার বলছে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতারণা ঠেকাতে এই উদ্যোগ।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে এবারের নিবন্ধনের মেয়াদ হবে দুই বছর। যারা নিবন্ধন করবে, তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজের ব্যবস্থা করা হবে। নিবন্ধন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তির বয়স পুরুষদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৮ আর নারীদের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছর হতে হবে। এবারের অনলাইন নিবন্ধন মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ২০০ টাকা পাঠিয়ে করা যাবে।
দেশের প্রতিটি জেলা থেকে সরকারিভাবে অন্তত এক হাজার কর্মীকে বিদেশে পাঠানোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের। এর আগেও সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সহ সরকারিভাবে শ্রমিক পাঠানোর নিবন্ধন ও লটারি হয়েছে।
কিন্তু এভাবে নাম নিবন্ধনকারীদের অনেকেই হতাশ হয়েছেন। যেমনটা বলছিলেন পটুয়াখালির মির্জাগঞ্জ উপজেলার আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলছেন, “চারবছর আগে একটি লটারি হয়েছিলো। আমি একজন ক্যান্ডিডেট ছিলাম। মেডিকেল করতে বরিশাল, ঢাকা এরকম নানা জায়গায় গিয়ে এতকিছু করতে অনেক খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু যেতে পারলাম না।”
এমন নিবন্ধন নিয়ে অবশ্য অনেকেই আবার বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তবে সরকারিভাবে খুব বেশি শ্রমিক শেষ পর্যন্ত বিদেশে যেতে পারেন না। অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা রাইটস অফ বাংলাদেশের পরিচালক জেসিয়া খাতুন অভিযোগ করছেন যে নিবন্ধনের মাধ্যমে যে ডাটা ব্যাংক তৈরি হয় সেখান থেকে খুব বেশ লোক নেয়া হয়না।
তিনি বলছেন, বাংলাদেশে ভিসা বিক্রির একটি চক্র গড়ে উঠেছে। সেটি বন্ধ করতে না পারলে এমন নিবন্ধন যেমন কাজ করবে না। তেমনি শ্রমিকের বিদেশ যাওয়ার খরচও কমিয়ে আনা যাবে না।
ভিসা বিক্রি কিভাবে হয় তার একটি বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছেন, “এটা দুইভাবে হয়। একটা হচ্ছে শ্রমিকরা যারা বেশ কয়েক বছর ধরে বিদেশে আছে তারা নিজেরাই মিডলম্যান হয়। সে যে কোম্পানিতে কাজ করে তার কাছে তথ্য থাকে সেখানে লোক নেয়া হচ্ছে কিনা। একটা টাকা অবৈধভাবে করে সে ওই ভিসা কালেক্ট করে এবং বাংলাদেশে ভিসাটা পাঠায়। ওই টাকাটা তোলার জন্য সে দেশের ওয়ার্কারদের কাছে বেশি দামে সেটা বিক্রি করে।”
এমন ভিসা বিক্রি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমেও হচ্ছে বলে তিনি জানালেন। পদ্ধতিটা কিছুটা একই রকম। তিনি বলছেন, “যে দেশ লোক নেবে নিয়ম হচ্ছে সেখানকার মালিক নিজ খরচে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে যাবে। কিন্তু দেখা যায় আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সি ওই মালিকের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে শ্রমিকের ভিসা নেয়। রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে এনিয়ে প্রতিযোগিতাও হয়। দেশে মাইগ্রাণ্ট ওয়ার্কারদের কাছ থেকে সে যে খরচ করেছে তার থেকে বাড়িয়ে নেয়া হয়।”
তিনি বলছেন, এই কারণেই ডাটাবেজ আগে থেকে থাকলেও সেখান থেকে শ্রমিক নেয়া হচ্ছে না। আর শ্রমিকদের বিদেশে কাজে যাওয়ার খরচও বাড়ছে। এই নিবন্ধনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া শ্রমিকদের ডাটাবেজ নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী? জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ শামসুল আলম বলছেন, এই ডাটাবেজ দেখেই যোগ্যতা অনুযায়ী শ্রমিক নেবেন, এমন আগ্রহ পাওয়া গেছে যেসব দেশ বাংলাদেশে থেকে শ্রমিক নিতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে।
তিনি বলছেন, “ডাটাবেজে শ্রমিকদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, যোগ্যতা ও সব তথ্য থাকবে। সম্প্রতি আমরা কাতার গিয়েছিলাম। তারা ডাটাবেজ দেখে শ্রমিক বাছাই করে নেবে বলেছে।”
ভিসা বিক্রির অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেননি। তিনি বলছেন, “ভিসা বিক্রি একদম নাই তা না। দালালদের কার্যক্রমে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এমনও না। তবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্যেই এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া, সার্ভারের মাধ্যমে ডাটাবেজ ও ব্যাংকিং চ্যানেলে নিবন্ধন। আমরা আসলে চাই যে মানুষ যাতে প্রতারিত না হয় এবং স্বল্প ব্যয়ে, ক্ষেত্র বিশেষে শূণ্য খরচে যাতে মানুষ বিদেশ যেতে পারে।”