আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করছেন কৃষকরা। আশুগঞ্জে ২০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখি চাষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার জানান- ‘সূর্যমুখী চাষের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হয় তাহলে প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। এক মণ বীজ থেকে ১৮ কেজি তেল পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি তেল বাজারে ২৮০ টাকা দামে বিক্রি করা যায়।
“সূর্যমুখীর তেল ছাড়াও খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর কোনো অংশই ফেলা যায় না। এছাড়া সূর্যমুখি চাষের পরও কৃষক যথা সময়ে আউশ ধানের চাষ করতে পারবেন এসব তেল প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।”
আশুগঞ্জের বিভিন্ন সূর্যমুখি প্রদর্শনী প্লটে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমসুখি ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এটি যেন ফসলী জমি নয়, এ এক দৃষ্টি নন্দন বাগান। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতি প্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখি ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মুলত ভোজ্য তেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠেবেন বলে কৃষি অধিদপ্তর মনে করছে।
কৃষকরা জানান, গত পৌষ মাসের প্রথম দিকে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন তারা। একটি পরিণত সূর্যমুখি ফুলের গাছ ৯০ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। পরিণত হয়ে ইতোমধ্যেই সূর্যমুখী গাছে ফুল ধরেছে। তারা আরো জানান, ফেনীর সোনাগাজীতে সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল তৈরির কারখানা আছে।তাদের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আমাদের উৎপাদিত সূর্যমুখী ফুলের বীজ তারা কিনবে। কৃষকদের কাছ থেকেই কোম্পানি সরাসরি বীজ কিনবে। কৃষি অফিস মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।
আশুগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি বছরে উক্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। মোট ২০ বিঘা জমিতে কৃষকরা হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ, সার এবং আন্ত-পরিচর্যার জন্য উপকরণ ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের বায়েক গ্রামের সূর্যমুখী ফুলের চাষি সারোয়ার আলম জানান, আগে তিনি তার জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে প্রথমবারের মতো তিনি এবং তার ভাই ৬৬ শতাংশ জমিতে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশা করি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব ইনশাআল্লাহ।